শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০

গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) (Elme Marefat)

গাউসুল আজম হযরত  আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)
 

গাউসুল আজম হযরতআবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)

‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম’ বা ‘গিয়ারবী শরীফ’ :
ওলীকুলের শ্রেষ্ঠ, কুতুবে রব্বানী, মাহবুবে সোবহানী গাওসুল আজম হযরত মুহিনুদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর ওফাত দিবস হিসেবে পরিচিত এই পবিত্র দিবসটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র যথাযথ মর্যাদা সহকারে উদযাপিত হয়ে থাকে। তারই প্রবর্তিত কাদেরিয়া তরিকাপন্থী কোটি কোটি মুসলমানের নিকট দিবসটির তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। তরিকতের ইমাম মহান সাধক হযরত গাওসুল আজমের রূহানী, আধ্যাত্মিক, ভক্ত-অনুসারীর প্রাণপ্রিয় এই ‘বড় পীর’ দুনিয়াময় ইসলামের যে আলোক শিখা জ্বালিয়ে গেছেন তা অনন্তকাল অনির্বাণ থাকবে।
বংশধারা : গাওসুল আযম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) মা-বাবা উভয় দিক থেকে ছিলেন হাসানী-হোসাইনী অর্থাৎ হযরত আলী (র.)-এর বংশধর। তিনি হিজরী ৪৭০ সালের ১ রমজান মোতাবেক ১০৭৭-৭৮ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ৫৬০-৬১ সাল মোতাবেক ১১৬৬ খৃস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯০-৯১ বছর। বাগদাদে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। কোরআন তফসীর, হাদীস, ফেকাহ, বালাগত (অলংকার শাস্ত্র, সাহিত্য), ইতিহাস অংকশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি প্রচলিত সব বিষয়ে সনদ লাভ করেন। তিনি যুগ শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে এবং শরিয়ত ও তরিকতের অনন্য সাধারণ ইমাম হিসেবে এবং ইসলামের পূর্ণজীবনদানকারী হিসেবে সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন ছিলেন।
ওফাত দিবস : হযরত গাওসুল আজমের ওফাত দিবস ‘ফাতেহা-ইয়াজদহম’ বা ‘গিয়ারভী শরীফের’ প্রথমোক্ত নামটি অধিক পরিচিত এবং সূচনা কাল থেকেই এখানে প্রচলিত। দিবসটির উদ্ভব ও প্রচলন সম্পর্কে কিছু চমৎকার বিবরণ পাওয়া যায়, যার নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করার অবকাশ থাকলেও দিবসটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা সর্বজন স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বের আওলিয়ায়ে কেরামের ইতিহাসে গাওসুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (র.)-এর স্থান নিঃসন্দেহে সকলের ঊর্ধ্বে। এখানে তার ওফাত দিবস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক।
হযরত গাওসুল আজম হিজরী ৫৬১ সালের রবিউস সানী মাসে ওফাত পান। খ্রিস্ট সাল অনুযায়ী যা ছিল ১১৬৬ সাল, তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ৮, ৯, ১১, ১৩ এবং ১৭ পর্যন্ত এ পাঁচটি তারিখের উল্লেখ পাওয়া গেলেও সর্বসম্মত মত হচ্ছে ১১ রবিউস সানী। ফারসি ভাষায় ১১ কে ইয়াজদহম এবং উর্দুতে ‘গিয়াবা’ বলা হয়। এবং গিয়াবা থেকে ‘গিয়ারভী’ শরীফের উৎপত্তি। দুটি নামের প্রচলন করে থেকে এবং কীভাবে শুরু হয় সে সম্বন্ধে কিছুটা মতভেদ দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন, হযরত বড় পীর সাহেব নিজেই এটা পালন করতেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা তার ওরস দিবস যা তার ইন্তেকালের পর মাসায়েখ ও ভক্ত-অনুসারীগণ পালন করতে আরম্ভ করেন। প্রথম মতের সমর্থন পাওয়া যায় আল্লামা ইমাম ইয়াফেযী কাদেরী (র.)-এর বক্তব্য হতে। আল্লামা ইয়াফেযী (র.) বলেন, ‘ফাতেহা ইয়াজদহম’ হযরত রাসূলে করীম (স.)-এর ওফাত দিবস, যা বড় পীর সাহেব তার জীবনে পালন করতে থাকেন। এ সম্বন্ধে আল্লামা ইয়াফেযী তার বিখ্যাত পুস্তক ‘কোরবাতুন নাজেরা’-তে বলেছেন, একদা বড় পীর সাহেবের ‘গিয়ারভী’ শরীফের আলোচনা হতে থাকলে তিনি (পুস্তক রচয়িতা) বলেন, এর নিয়ম এই যে, বড় পীর সাহেব রবিউস সানী মাসের ১৩ তারিখে হুজুর (স.)-এর ‘খতম শরীফ’ নির্ধারিত করে দেয়া হয়। তারপর অন্যরাও তার অনুকরণে একাদশ তারিখে হযরত রাসূলে করীম (স.)-এর নামে খতম পড়াতে আরম্ভ করেন। ক্রমশ এটা হযরত বড় পীর সাহেবের ‘গিয়ারভী শরীফ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এখন তার ওরসও একাদশ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ তার ওফাত সর্বসম্মতভাবে ১১ রবিউস সানী দিবসে।
উল্লেখিত বিবরণে একটা খটকা থেকে যাচ্ছে যে, প্রচলিত প্রথা অনুসারে কারো মৃত্যুর পর চল্লিশতম দিবসকে ফারসিতে ‘চেহলাম’ বলা হয়। বর্ণিত বক্তব্যে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ‘চেহলাম’ ১১ রবিউস সানী কিভাবে সঠিক হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল হতে হিসাব করা হলে চেহলাম বা চল্লিশ পূর্ণ হতে গোটা রবিউস সানী শেষ করে পরবর্তী জমাদিউল আউয়াল মাসেরও তিন দিন হিসাব করতে হয়। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত ৯ রবিউল আউয়াল ধরা হলে রবিউস সানী মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ৪০ দিন হয় যদি রবিউল আউয়ালকে ৩০ দিন ধরা হয়। তা হলে প্রশ্ন আসে বড় পীর সাহেব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেই কথিত চেহলাম কোন তারিখ হতে হিসাব করতেন? নির্ভরযোগ্য ইতিহাস সূত্রের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হওয়া আবশ্যক। আর বড় পীর সাহেবের ওফাত দিবসকে ‘গিয়ারভী’ শরীফ বা ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম যাই বলা হোক না কেন তাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ থাকে না এবং রাসূলুল্লাহ (স.)-এর চেহলাম হিসাব করার প্রশ্নও আসে না, যা এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের (আলমগীর) ওস্তাদ এবং নূরুল আনোয়ার নামক বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা মোল্লা জুযুনের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ তার পুস্তকে লিখেছেন যে, অন্যান্য মাসায়েখের ওরশ বছর শেষে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু হযরত বড় পীর সাহেবের এটা এমন একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শান যে, বুজুর্গানে দ্বীন কর্তৃক তার ওরস গিয়ারভী শরীফ প্রতি মাসে নির্ধারিত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে (সরকারিভাবে ও) বছরে একবার রবিউস সানী ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম বহুকাল থেকেই উদযাপিত হয়ে থাকে।
হযরত শেখ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (র.) যার যুগ হিজরী ৯৫৮ থেকে ১০৫২ সাল পর্যন্ত তিনি ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম সম্পর্কে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করেছেন তা উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘মা সাবাতা বিস সুনাহ’ নামক বিখ্যাত পুস্তকে হযরত মোহাদ্দেস দেহলবী ‘রবিউস সানী’ মাসের আলোচনা করতে গিয়ে গাওসুল আজমের ওরস সম্পর্কে লিখেছেন : ‘জানা নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মতে গাওসুল আজমের ওরস ৯ রবিউস সানী তারিখে হওয়া উচিত এবং পীর-মুর্শিদ শেখ আবদুল ওহাব কাদেরী মোত্তাকী মক্কী (র.) এই তারিখকে তার ওরস বলে গণ্য করতেন। ওরসের এই তারিখটাই নির্ভরযোগ্য এ কারণে যে, আমাদের পীর-মুর্শিদ শেখ আজম আলী মোত্তাকী (র.) এবং মাসায়েখের নিকট এই তারিখই নির্ভরযোগ্য। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে ১১ রবিউস সানী তারিখই অধিক প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত এবং ভারতে (পাকিস্তানে) অবস্থানরত গাওসুল আজমের বংশধর ও মাসায়েখে কেরাম একাদশ তারিখে ওরস করে থাকেন।

ধন্য ধন্য মেরা সিলসিলা এলো দিল্লীতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া! (Elme Marefat)

মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

লতিফা সমাচার! / Latifa Samachar / Latifa news (Elme Marefat)

 


লতিফা সমাচার!

সূফিবাদের পরিভাষায় লতিফা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।লতিফার সাথে পারতপক্ষে মানুষের জড়জগতের কোন সম্পর্ক নেই।লতিফা বিষয়টি সম্পূর্ণরুপে আধ্যাত্মিক।লতিফা যেসকল উপাদান্সমূহ নিয়ে গঠিত তা কুরআন-হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।লতিফা সম্পর্কিত আলোচনা নিম্নে বিস্তারিতভাবে করা হলঃ

লতিফার সংজ্ঞা।

লতিফা হল চিকন,পাতলা,সুক্ষ্মস্তর বিশিষ্ট একটি বস্তু যা মানুষের অন্তরের ভিতর বিশেষ স্থানে অবস্থিত।লতিফা এমন এক বিষয় যা কখনও চোখে দেখা যায় না,কানে শোনা যায় না এবং মস্তিষ্কে কল্পনা করা যায় না।

সূফিবাদের পরিভাষায়,লতিফা মানুষের অন্তরের ভিতর অবস্থিত এমন কিছু নির্দিষ্ট স্থান,যার উপর আল্লাহ পাকের যিকিররত অবস্থায় আল্লাহ পাকের নূর অবতীর্ণ হয়।

লতিফার প্রকারভেদ।

লতিফা মোট দশটি।সেগুলো হলঃকলব,রুহ,শিররুন,খাবী,আকফা,নাফস,আব,আতস,খাক,বাদ লতিফা।তবে এসকল লতিফার ভিতর প্রথম ছয়টি লতিফা হল মূখ্য আর বাকিগুলো হল গৌণ।এসকল লতিফা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলঃ

১.কলব লতিফাঃ আল্লাহ পাকের জ্যোতি ধারনের ঐ আধার যার অবস্থান মানুষের বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নীচে অবস্থিত।যা দেখতে অনেকটা অর্ধাকার ডিম্বাকৃতির পুষ্পকলার ন্যায়।কলব লতিফা আল্লাহ পাকের হরিদ্র্য বর্ণের ন্যায় আধার ধারন করে। এই লতিফার স্থান আদম(আঃ)এর পায়ের নীচে।যে ব্যক্তি এই লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে তাকে আদমই মাশরাফ বলা হয়।কলবের কথা কুরআন-হাদীসের ভিতর অসংখ্য জায়গায় পাওয়া যায়।যেমন আল্লাহ বলেন,

আল্লাহ্র যিকির দ্বারাই (তারা) অন্তর সমূহ শান্তি পায়[রাদঃ২৮]

রাসূল(সাঃ) বলেছেন,

শরীরের দেহে একটি মাংস আছে যদই তা পরিশুদ্ব হয় তবে গোটা শরীর পরিশুদ্ব হয়।আর যদি তা খারাপ হয়,তবে সমস্ত শরীরই খারাপ হয়।মনে রেখো তা হল কাল্ব বা দিল

বুখারী ও মুসলিম।

একজন মুমিনের কলব আল্লাহের আরশে পরিণত হতে পারে।ভাল কাজের দ্বারা এ লতিফাটি উজ্জলতা বৃদ্বি পায় আর এক সময় তা সম্পূর্ণরুপে শ্বেতবিন্দুতে পরিণত হয়।আর মানুষ যখন পাপ কাজ করে তখন তা কৃষ্ণ বর্ণে পরিণত হয় এবং সেখান থেকে আল্লাহ পাকের নূরের তাজাল্লী উঠে যায়।তাই কলবকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য আল্লাহ পাকের যিকির বেশি করতে হবে আর তার দ্বারা আল্লাহ পাকের আরশ লাভ করা যায়।নামাযের সময় সুরাহ ফাতিহা তিলওয়াতের দ্বারা কলবের সংশোধন হয়।

২.রুহ লতিফাঃ রুহ লতিফাটি মানুষের ডান স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে অবস্থিত।এই লতিফাটি আল্লাহ পাকের লাল জ্যোতি ধারন করতে সক্ষম।এ লতিফাটি নূহ(আঃ)এবং ইব্রাহীম(আঃ)এর পায়ের নীচে অবস্থিত।সাধনার যে চরম পর্যায় এর বেলায়েতপ্রাপ্ত হয় সে নূহে মাশরাফ এবং ইব্রাহীমে মাশরাফ প্রাপ্ত হয়।রুহ লতিফা এর বিষয়টি কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।আল্লাহ বলেন,

তারা আপনাকে রুহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে,বলুন এ ব্যাপারে আমাকে অতি স্বল্প জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।

এই লতিফাকে মানুষের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।ভালকাজের দ্বারা একজন মানুষের রুহের শুভ্রতা বৃদ্বি পায় এবং এর দ্বারা সে অতি সহজে সে আল্লাহ পাকের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়এবং পাপাচারের দ্বারা মানুষ বাহ্যিকভাবে জীবিত থাকলেও আত্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।আল্লহ পাকের সিফাতের ফিকিরের দ্বারা রুহ লতিফা আল্লাহ পাকের তত্ত্বজ্ঞান লাভে সমর্থ হয়।রুকেতে সিফাত উচ্চারণের দ্বারা আল্লাহ পাকের সিফতের প্রতি ধ্যান-ফিকির রুহের দ্বারা করা হয়।

৩.শিররুনঃ এ কথাটির অর্থ হল গোপনীয়তা কিংবা গোপন হৃদ্বয়।এ লতিফাটি মানুষের বুকের একেবারে মাঝ বরাবর একটু নীচে অবস্থিত।এ লতিফাটি আল্লাহ পাকের সাদা জ্যোতিকে আকর্ষণ করে।বলা হয়ে থাকে এ লতিফাটি মূসা(আঃ)এর পায়ের নীচে অবস্থিত।যে ব্যক্তি এই শির লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হয় তাকে মূসলে মাশরাফ বলা হয়।এ লতিফা শুভদৃষ্ট এবং অশুভদৃষ্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে।আল্লাহ পাকের সিফত এবং আহকামের গুঢ় রহস্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা যায়।নামাযের ভিতর ১ম সিজাদাহের দ্বারা শিরের ফিকির হয়

৪.খাফি লতিফাঃ এ লতিফাটিও অত্যন্ত গোপনীয়।এটি আল্লাহ পাকের কৃষ্ণ রঙ ধারন করতে সক্ষম।এটি মানুষের বুকের মাঝখানে রুহের নীচে অবস্থিত।এই লতিফাটি ইসা(আঃ)এর পায়ের নীচে অবস্থিত।যে ব্যক্তি এর বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে সে হবে ইসা মাশরাফ।এ লতিফাটি মানুষের কর্ম ও চিন্তা অনুযায়ী মানুষের অন্তরে আনন্দ এবং বেদনা দেয়।আল্লাহ পাকের সিফাতের মধ্যে নিজেকে ফানা করার মধ্য দিয়ে এ লতিফার বেলায়েত লাভ করা যায়। নামাযের সময় ২য় সিজদাহের দ্বারা খফীরের দ্বারা ফানা হয়।

৫.আকফা লতিফাঃ এই লতিফাটি অতি গোপনীয়।ইহা মানুষের বুকের মাঝে নীচে অবস্থিত।এই লতীফাটি আল্লাহ পাকের সবুজ বর্ণ ধারন করতে সক্ষম।এ লতিফার ব্যাপারে আরও বলা হয় যে, এই লতিফাটি মুহাম্মদ(সাঃ)এর পায়ের নীচে অবস্থিত।যে ব্যক্তি এ লতিফার বেলায়েতপ্রাপ্ত হবে সে হবে মুহাম্মদী মাশরাফ।একে মানুষের মস্তিষ্কের দেহ এবং মনের রাজাস্বরুপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।মানুষের অন্তরে প্রাপ্ত চিন্তা মস্তিষ্কের অনুমোদন প্রাপ্ত কাজ বাস্তবে পরিণত করে।বাকাবিল্লাহের দিকে ধাবিত হয়ে এর বেলায়েত অর্জন করা যায়।নামাযরত অবস্থায় তাশহাদুদ পাঠের মধ্য দিয়ে আকফার খিলফত লাভ করা হয়

৬.নাফসঃএই লতীফাটি মানুষের কোন অঙ্গে থাকে তা সঠিকভাবে বলা যায় না।ধারনা করা হয় যে, এই লতিফাটি মানুষের দুই চোখ অথবা দুই কপালের মাঝখানে অথবা নাভিরনীচে অবস্থিত।ইহা মরীচীকার ন্যায় রুপ ধারন করে।ইহা কখনও সাদা,কখনও কালো আবার নীল বর্ণ ধারন করে।তবে বেশির ভাগ সময় এটি বিজলী বর্ণের ন্যায় সাদা সাদা হয়।এ লতিফার মাধ্যমে শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রনা দেয় এবং মানুষকে ধোকায় ফেলে।যাদের পীর নেই তাদেরকে শয়তান সহজে ধোঁকার দেয়। আর যাদের পীর-আউলিয়াদের সহুবতে থাকবে তারা নফসের কু-প্রবৃত্তি হয়ে বত্য রাখতে পারবে।নামাযের সময় নিয়্যত থেকে তাকবীরে তাহরীমা পর্যন্ত নফসকে জবাই করা হয়।

৭.আব লতিফাঃ আব অর্থ পানি।মানুষের সকল মৌলিক উপাদান আব নিয়ে গঠিত।ওলামা-মাশায়েখগণ এর মোরাকাবা করে থাকেন।যিকিরের মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়।এই যিকিরের দ্বারা মাকামে কানায়েত(অল্পতুষ্টি)ফায়েযপ্রাপ্ত হয়।এই যিকিরের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বাহিরের পানি আর ভিতরের পানি একত্রিত হয়ে যিকির করছে।

৮.আতস লতিফাঃ আতসের অর্থ হল আগুন।এই লতিফাটি মানুষের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।তাসলীম এর মাধ্যমে এর মোকারাবা করা হয়।লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লহ এর ইশক এবং মহব্বত পয়দা হয় এবংদুনিয়া ভষ্মীভূত হয়।এই লতিফার দ্বারা হাকীকতে মাকাম পয়দা হয়।

৯.খাক লতিফাঃ এটি ফার্সী শব্দ।এর অর্থ হল মাটি।সমস্ত শরীরের হাড়,গোশত,চামড়া,চুল এ লতিফার অন্তর্ভূক্ত। এ লতিফার দ্বারা রিজা মোকারাবা করা হয়।যিকিরের সময় তকদীরের উপর সন্তুষ্টির ব্যাপারে এ লতিফা কাজে আসে। এ লতিফার যিকিরের দ্বারা সহনশীল হওয়ার অভ্যাস পয়দা করা যায়।এ লতিফার যিকিরের দ্বারা আল্লাহ পাকের প্রতিটি বিধানের প্রতি রাজি থাকার ব্যাপারে উদ্বুদ্ব করে।

১০.বাদ লতিফাঃ এর অর্থ হল বায়ু।শরীরের ভিতর ফাঁকা জায়গাকে বাদ লতিফা বলা হয়।এটি সবদিকে বিরাজমান।এই লতিফার যিকিরের দ্বারা ছবরের ফায়েজ হয়।সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই লতিফার যিকির করতে হবে।ধংসবের স্বভাব পরিহার করার জন্য এ লতিফার যিকির করতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন,ভিতরের বাতাস এবং বাহিরের বাতাস একত্রিত করে যিকির করতে হবে।

পারতপক্ষে শেষের চারটি লতিফা মানুষের শুরুর ছয়টি লতিফার সাথে থাকে।এক এক সময় এক এক জায়গায় থাকে।

নামাযের সাথে লতিফার সম্পর্কঃ

মুসলমানগণ দৈনন্দিন জীবনে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে তার প্রত্যেকটা কাজের সাথে লতিফা সম্পর্কযুক্ত।তা হলঃ

লতিফার যিকিরসমূহঃ

১।প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে যেকোন ধরনের যিকির দ্বারা লতিফার যিকির হয়।

২।চোখ বন্ধ রাখতে হবে।

৩।নামযের শেষ বৈঠকের মত বসা

৪।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বা আল্লাহু দ্বারা যিকির করা

৫।প্রথমে পৃথক পৃথক লতফার জন্য যিকির করা।পর দশ লতিফার জন্য একত্রে যিকির করা।

৬।যিকিরের পূর্বে যে লতিফার যিকির এবং মুরাকাবা করতে হবে সে লতিফার নাম উল্লেখ করতে অহবে।

৭।নিয়ত করতে হবে।যেমন কেউ যদি রুহ লতিফার যিকির করতে চায় তাহলে তাকে নিম্নোক্ত উপায়ে যিকির করতে হবেঃ

হে আল্লাহ আমি আমার রুহ লতিফার তরফে মুতাওয়াল্লি আছি,আমার রুহ লতিফা আমার পীর সাহবের রুহ লতিফার কামিল হয়ে আল্লাহ পাকের মুতাওয়াজ্জের আছে।

৮।নাভীর নীচে নফস হতে লা টেনে রুহ পর্যন্ত আসবে।অতঃপর ইলা খফি হতে সির টেনে হা শব্দ আখফা পর্যন্ত আসবে।হা এর সাথে দুনিয়ার মহব্বত বের হয়ে যাবে।ইল্লল্লাহ শব্দ স্বীয় কলবের উপর আঘাত করে ময়লা দূর করবে।

৯।সকল লতিফার পৃথক পৃথক যিকির করে একসাথে দশ লতিফার যিকির শুরু করতে হয় যার দ্বারা লতিফার প্রতিটি অংশ নূরে তাজাল্ল পয়দা হবে। এবং এর প্রভাবে রঙ আনুপাতিকভাবে বিভিন্ন রঙ অন্তঃচক্ষুতে দৃষ্ট হয়।দশ লতিফার যখন একত্রে যিকির করে তখন সকল লতিফার যিকির মিলিত হয়ে এক শব্দের প্রতিধবনি করে এবং লতিফাসমূহের বিভিন্ন রঙ একত্রে মিলিত হয়ে এক অভিনব নূরানী রঙ ধারন করে এবং যিকিররত ব্যক্তি এক পরম শান্তি অনুভব করে।

উপসংহারঃ

লতিফার যিকিরের গুরুত্ব অপরিসীম।প্রকৃতপক্ষে নিজের জীবনকে পাপাচার্য থেকে মুক্ত রাখার জন্য লতিফার গুরুত্ব অপরিসীম।লতিফার যিকির ছাড়া কখনও আত্মশুদ্বি অর্জন সম্ভব নয়।


দরূদ শরীফের ফজিলত (Elme Marefat)


 

আহেলে বায়েত ও হজরত খাঁজার শানে মিলাদ, Pak Panjaton & Hajrat Khaja Shane...

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

এক চক্ষেতে হাসন কান্দে - Fakir Lalon Saha - Elme Marefat


 এক চক্ষেতে হাসন কান্দে  -  Fakir Lalon Saha 

এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন আমার
এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন..
গুরু তোমার বিরহের ছলে
আমার বুকের আগুন আমার
এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন..

এক পথে তোর জগত জোড়া সুখেরি আলো
আর একটা পথ নাইরে চেনা আঁধারে কালো
এক পথে তোর জগত জোড়া সুখেরি আলো
আর একটা পথ নাইরে চেনা আঁধারে কালো
আমি জানি গুরু তুমি আছো সেইনা পথে
আমি জানি গুরু তুমি আছো সেইনা পথে
আমি পাগল সব ছেড়েছি তোমায় ভালোবেসে
আমার এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন

হাসনের মাটির পিঞ্জিরায় কান্দে আমার মন
লালন বলে ভোলা মনরে সঁপে দে এখন
হাসনের মাটির পিঞ্জিরায় কাঁদবে আমার মন
লালন বলে ভোলা মনরে সঁপে দে এখন
আমার হৃদয় দিলাম গুরু তোমার চরণতলে
আমার হৃদয় দিলাম গুরু তোমার চরণতলে
তুমি আমায় গ্রহন কর শুদ্ধ কর মোরে

ওরে আমার এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন..
আমার এক চক্ষেতে হাসন কান্দে
আর এক চক্ষে লালন..
গুরু তোমার বিরহের ছলে
আমার বুকের আগুন
আমার এক চক্ষেতে হাসন
কান্দে আর এক চক্ষে লালন..

গুরুর চরন - Gurur Choron - Lyrics by Asadul Islam (Elme Marefat)